ফলের রাজা আম। আম খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিশ্বের সব দেশে আম নেই, কিন্তু একবার যে এই আম খেয়েছে তার পক্ষে একে ভোলা
সম্ভব নয়।
আমের ইতিহাস
এ ভূভাগের প্রিয় ফল আম বিশ্বের অন্যত্রও নিজেকে বিকশিত করেছে। প্রখ্যাত
চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে
বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তোলেন। মোগল সম্রাট আকবর
(১৫৫৬-১৬০৫) ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে এ
উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আমবাগান সৃষ্টি করে আমকে আরো উচ্চতর আসনে
বসান।
জানা যায়, ১৯৪৫ সালের আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মোট আম উৎপাদনের বেশির ভাগ এ দেশে
উৎপাদিত হতো। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ আম উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে ছিল। ভারত,
মেলাঙ্কা ও ব্রাজিলের পরই ছিল এ দেশের স্থান। এখন বাংলাদেশের স্থান ১৫-১৬টি
দেশের নিচে। আম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কৃষক, গৃহস্থর পাশাপাশি
সরকারি পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী
থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরো পরে খ্রিষ্টাব্দ দশম শতাব্দী দিকে।
বাংলাদেশে আম
বাংলাদেশে যেসব ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আমের
নানাবিধ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমাণের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল হিসেবে
পরিচিত। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবই
আমচাষের উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম ফলে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত
ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুমচাষ এলাকায়ও উন্নত
জাতের আম ফলছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর,
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, যশোর আমচাষের শীর্ষে অবস্থান করছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩২ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ৭৮ হাজার
১৯৫ একর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন হচ্ছে আট লাখ দুই হাজার ৭৫০
টন। বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। আর আমচাষের এলাকা তো
প্রতিবছরই বাড়ছে। উৎপাদনও বাড়ছে। আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের
মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজির মতো। ভারতে মাথাপিছু ১১ কেজি,
পাকিস্তানে ৬ কেজি, মেলঙ্কাতে ৯ কেজি, ফিলিপাইনে ৬ কেজি, তানজানিয়ায় ৭
কেজি, সুদানে সাড়ে ৭ কেজি, জায়ারে ৫ কেজি এবং হাইতিতে ৫৫ কেজি।
কত রকম আম!
পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ ধরনের আম রয়েছে। কত রকম আমই না আমরা খেয়ে থাকি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
রাজশাহীর আম হল সত্যিকার অর্থে ‘ফলের রাজপুত্তুর’। এখানকার আমের
মধ্যে সেরা হলো ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাতি (গোপালভোগ), হিমসাগর, লক্ষণভোগ,
মোহনভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই। আছে রানীপসন্দ, বেগম পসন্দ, বাদশাপসন্দ,
বিশ্বনাথ, বউ ভোলানী, ডাব, মনোহরা, আপেল, ময়ূরপঙ্খি, আলফানসো। বাংলাদেশ ও
ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে একটি ছোটখাটো তালিকা তুমিও করতে
পারো। এর মধ্যে সব আমাদের দেশে হয়তো নেই। তবে নামের বেলায় বাংলাদেশ-ভারতের
মধ্যে সীমা নেই। যেমন বাদশাহী, আলমশাহী, বৃন্দাবনী, দিলশাদ, কোহিনূর,
কোহেতুর, ওয়াবজান, হায়াত, বড় শাহী, ছোট শাহী। দিলখোশ, ফেরদৌসপসন্দ,
সুলতানপসন্দ, বোম্বাই ও গোলাবখাস প্রভৃতি আম নবাবগঞ্জ, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ
এলাকায় হয়। নবাবগঞ্জের পুবে রাজশাহীতেও এর অনুকরণে নাম আছে। রাজশাহী ও
নবাবগঞ্জে তাই আছে ক্ষীরসাপাতি, বোম্বাই ক্ষীরসাপাতি, সর ক্ষীরসাপাতি, ছোট
ক্ষীরসাপাতি, কোহেতুর, জাফরান, মোহনভোগ প্রভৃতি। তারপর হিমসাগর,
ক্ষীরসাপাতি, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, আষাঢ়ী, শ্রাবণী, ভাদুরিয়া, লম্বা এবং
আশ্বিনী প্রভৃতি। কতই না চমৎকার সব নাম! যেমন বিসমনী, ভরত, বিড়া, ভোজ,
বৃন্দাবনী, বাবুই ঝাঁকি, বাতাস, চম্পা, চকচকি, চাপাতি, দুধসর, দ্বারিকা,
দুধকুমার, দুধভোগ, আক্কেল গরম, ডায়মন্ড, নীলম, দোকশলা, বারোমাসি,
কাঁচামিঠে, মিছরীভোগ, মিঠুরা, তোতাপুরী, কপটভাঙ্গা, হাতিঝুল, অরুনা,
সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, কেন্ট, পাহুতান,
ত্রিফলা ইত্যাদি। এ ছাড়া আরও আছেÑ কোলোপাহাড়, ফারীয়া, লতা, তোতা ফজলি,
চিনি ফজলি, মালদহ, গৌরজিৎ, কিষাণভোগ, কালিভোগ, শিকাভোগ, সীতাভোগ, মিছরিভোগ,
চিনিভোগ। আরও কত ভোগ যে আছে! আবার ল্যাংড়ার মধ্যেও আছে নানা নাম। এই যেমন
ল্যাংড়া, হাজি ল্যাংড়া, কাশীর ল্যাংড়া ইত্যাদি। আরও নানা নামের ল্যাংড়া
আছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানে গিয়েও সব নাম লেখা সম্ভব নয়। একটা
কথা বলে রাখি, যত গাছপাকাই হোক না, ওই গাছপাকা আম আরও তিন দিন রেখে খেলে
তবেই আমের আসল ও মধুর স্বাদ পাওয়া যাবে। তখন আম হবে সত্যিকার অর্থে অমৃত
ফল।
বাংলাদেশে আবার উন্নত জাতের গবেষণাগারে উদ্ভাবিত আম হল বারি-১, বারি-২,
বারি-৩ এবং বারি-৪। এখন নতুন যোগ হয়েছে আম্রপালি ও মল্লিকা। দিনাজপুরের
সূর্যপুরীও বিখ্যাত।
উৎকৃষ্ট জাতের আম স্বাদে-গন্ধে খুবই আকর্ষণীয়। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আমের বর্ণনা দেয়া হলো :
ফজলি আম : আকারে বড় ও স্বাদ-গন্ধে অতুলনীয় ফজলি আম সাধারণত আষাঢ় মাস থেকেই
পাকতে শুরু করে। ভারতের মালদহ জেলার ফজলি আমের জাত সুখ্যাত। আমাদের দেশের
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে ফজলি আমের চাষ হয় প্রচুর। এই ফজলি আম একটু আগাম
জাতের। এগুলোই বাজারে আসে প্রথম। আষাঢ়ের প্রথম পর্যায়ে। রাজশাহীর ফজলি শেষ
হলে আসতে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি।
ফজলি আম আগে ‘ফকিরভোগ’ বলে পরিচিত ছিল। কথিত আছে, ফজলি বিবি নামে এক
বৃদ্ধার বাড়ি থেকে প্রথম এই জাতটি সংগৃহীত হয়েছিল। তিনি বাস করতেন বাংলার
স্বাধীন সুলতানদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের একটি প্রাচীন কুঠিতে। তার বাড়ির
আঙিনায় ছিল একটি পুরনো আমগাছ। তবে এটি কোন্ জাতের, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল
না তার। ফজলি বিবি গাছটির খুব যতœ নিতেন। গাছটিতে প্রচুর আম ধরত। আমগুলো
যেমন আকারে বড়, তেমনি সুস্বাদু। সেখানকার নির্জনবাসী ফকির-সন্ন্যাসীদের
তিনি এই আম দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সে জন্য ফজলি বিবি এই আমের নাম দিয়েছিলেন
‘ফকিরভোগ’।
ব্রিটিশ যুগে মালদহের কালেক্টর র্যাভেনশ একবার অবকাশ যাপনের জন্য ফজলি
বিবির কুঠির কাছে শিবির স্থাপন করেছিলেন। সাহেব আসার খবর পেয়ে ফজলি বিবি
ফকিরভোগ আম নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। র্যাভেনশ সাহেব আম খেয়ে অত্যন্ত
মুগ্ধ হন। ফজলি বিবির আতিথেয়তায় এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি ওই আমের
নামটিই রেখে দেন ‘ফজলি’। তখন থেকে এই নাম মানুষের মুখে মুখে চারদিকে ছড়িয়ে
পড়ে।
আমের মধ্যে ফজলি জাতটি বড় আকারের। আমের ওজন ৫০০ থেকে ১২৫০ গ্রাম পর্যন্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফজলি
আম গড়ে লম্বায় ১৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পাশে ৯ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন
গড়ে ৬৫৪ দশমিক ৪ গ্রাম হয়। আমটি দীর্ঘ এবং কিছু চ্যাপ্টা। পাকা আমের খোসা
কিছুটা হলুদ হয়ে ওঠে। শাঁস হলুদ, আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও
মিষ্টি। খোসা পাতলা। আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা। ফজলি আমের গড় মিষ্টতা
১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
ফজলি আম নাবি জাতের। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাকে। মুকুল আসা থেকে পাকা পর্যন্ত
সাড়ে পাঁচ মাস সময় নেয়। ফল পাড়ার পরে সাত-আট দিন পাকার জন্য সময় নেয়। ফলন
প্রায় নিয়মিত। একটি পরিণত গাছে গড়ে প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৬০০ আম ধরে।
ফজলির আরেকটি জাত হলো ‘সুরমা’। প্রচলিত নাম ‘সুরমা ফজলি’। এটি আকারে একটু
ছোট। তবে স্বাদে উৎকৃষ্ট। বাঘা ও চারঘাট এলাকায় উন্নতমানের ফজলি আম
ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে আসছে। অবিভক্ত ভারতে বাঘার ফজলি আম কলকাতার বাজারে
ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিল। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের চেয়ে আকারে অনেকটা ছোট
হলেও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। ইদানীং নওগাঁ জেলার বদলগাছি ও ধামইরহাট এলাকায়
‘নাক ফজলি’ নামের আরেকটি জাতের চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া দিনাজপুরেও ফজলি আমের
চাষ হয়।
ল্যাংড়া আম : আকবরের বাগানের আমের জাত ছিল ল্যাংড়া। দাঁড়ভাঙা ল্যাংড়া বলে
পরিচিত এ আম একপর্যায়ে বাংলাদেশে চলে আসে। এখন যশোর, সাতক্ষীরা,
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলায় প্রচুর দাঁড়ভাঙা ল্যাংড়ার চাষ
হচ্ছে। ল্যাংড়া আমের আদি নিবাস ভারতের বেনারস। কিংবদন্তি আছে, সেখানকার এক
ল্যাংড়া ফকিরের নামে এ আমের নামকরণ করা হয় ল্যাংড়া। এই আম ঋতুর মাঝামাঝিতে
(জুনের শেষাংশ থেকে জুলাই) পাকে।
গোপালভোগ : চমৎকার স্বাদের একটি আম। শাঁস গভীর কমলাভ। ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩২৫ গ্রাম। এটা আশু জাতীয় এবং জুন মাসে পাকে।
কিষাণভোগ : জুন-মধ্য জুলাইয়ে পাকে অর্থাৎ মধ্য মৌসুমি ফল। খেতে খুব স্বাদ।
খিরসাপাতি : আকারে গোপালভোগ অপেক্ষা সামান্য ছোট। খেতে খুব মিষ্টি ও ছোট
আঁটিবিশিষ্ট। শাঁস হলুদাভ বাদামি। এটিও আশু জাত অর্থাৎ জুনে পাকে। থোকায়
থোকায় ফল ধরে। ঘরে রাখা চলে।
হিমসাগর : হিমসাগর মাঝারি আকারের ফল। এ ফল ওজনে ৩৭৫ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়।
জুন-জুলাই মাসে পাকে। ফল রসালো, মিষ্টি ও আঁশবিহীন এবং আঁটি ক্ষুদ্রাকায়।
এর ত্বক মাঝারি পুরু। মিষ্টতা ও সংরক্ষণশীলতার দিক থেকে অপূর্ব!
কোহেতুর : মাঝারি আকারের এ ফল প্রায় ২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। এটি মূলত রাজশাহীর
আম। শাঁস রসালো, সুমিষ্ট, কোমল। পাকে জুন-জুলাইয়ে অর্থাৎ এটি মধ্য-মৌসুমি
ফল।
মোহনভোগ : ওজন ২৭৫-৬২৫ গ্রাম হয়। গোলাকার ধরনের ফল। মাঝারি-নাবী জাত।
গোলাপ খাস : ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম ওজন। আশু জাত। মে-জুন মাসে পাকে।
সামার বাহিশত চৌসা : এটি মাঝারি আকারের আম। এর কাঁধ সমান, ঠোঁট স্পষ্ট এবং
শাঁস হলুদ ও খুব মিষ্টি। এটিও নাবী জাত, জুলাই-আগস্টে পাকে।
আশ্বিনা : সবচেয়ে নাবী জাত। পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে।
আলফানসো : সবচেয়ে দামি ও জনপ্রিয় আম আলফানসো। গাছ মাঝারি আকৃতির। আম
গোলাকার। পাকলে হলুদ হয়। শাঁসও হলুদ। সুগন্ধ আর স্বাদের জন্য বিশ্বখ্যাত।
কোনো আঁশ নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরসহ আরো কয়েকটি
স্থানে আলফানসো ফলে। ভারতের মহারাষ্ট্রের রতœাগিরির আলফানসো সবার সেরা।
স্থানীয় ভাষায় এ আমকে বলা হয়, ‘কাকডি হাপুস’। এর অর্থ, কাগজের মতো পাতলা
খোসা। পাকা আলফানসো হাতে এক মিনিট রাখার পর এর সুগন্ধ হাতে লেগে যায়।
মজার আম রাঙ্গু : মিয়ানমারের জনপ্রিয় আম। দেখতে আকর্ষণীয়, খেতে সুস্বাদু।
তিন বছরের আঁটির চারায় প্রচুর আম ধরে। একটি আঁটি থেকে চার-পাঁচটি চারা হয়।
তিন বছরেই ফল আসে। খুব মিষ্টি আম এটি। শাঁস কমলা। খোসা খুবই পাতলা।
মিয়ানমার ছাড়াও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় এ আমের চাষ হচ্ছে। আঁটি ২৪ ঘণ্টা
পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর বাদামের মতো খোসা ছাড়ালে ভেতরে চার থেকে পাঁচটি
শাঁস পাওয়া যায়। প্রতিটি শাঁস থেকে চারা বের হবে। টবেও চাষ করা যায় রাঙ্গু।
এ আমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিটি আমের বুক চেরা। ওজন ২০০ থেকে ২৫০
গ্রাম। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণাকেন্দ্র এ আম নিয়ে গবেষণার পর
বারি-৮ নামে এটিকে মুক্তায়িত করেছে।
রঙিন আম : অনেক প্রকার রঙিন আম আছে। যেমন আপেল আম। এটি ঠিক আপেলের মতো
দেখতে। বিশ্বব্যাপী রঙিন আমের চাহিদা বেশি। বউভুলানি রঙিন আম। গোলাপ খাসও
রঙিন। একসময়ের সিঁদুরে আমটি আর দেখা যাচ্ছে না। গবেষকরা রঙিন আম নিয়ে এখন
বেশ আগ্রহী। সাতক্ষীরা এলাকায় একটি জাতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি দেখতে লতা
আমের মতো, আপেলের মতো রঙ।
বারো মাসে আম
একসময় আমের চারা আমগাছে ঝুলিয়ে জোড় কলম তৈরি করা হতো। এ পদ্ধতি খুবই জটিল।
এখন আমের কলম তৈরি করা খুবই সহজ। যেকোনো আঁটির আমের এক-দুই বছরের শক্ত-সতেজ
চারাকে অতি সহজেই উন্নত জাতের আমে রূপান্তর করা সম্ভব। উন্নত জাতের ডালের
মাথা ‘সায়ন’ সংগ্রহ করে আঁটির চারার মাথায় বসিয়ে দিলেই হলো। চার থেকে ছয়
ইঞ্চি সায়নের দুই দিকে তির্যক করে কেটে আঁটির চারার মাথা কেটে এরপর কাটা
মাথা ফেঁড়ে ওই সায়ন বসিয়ে পাতলা পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর আরেকটি
পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে নতুন সায়নে পাতা
গজাবে। এরপর পলিথিন খুলে দিলেই আঁটির চারাটি উন্নত জাতের আমে পরিণত হবে।
বর্ষা মৌসুমে ওই চারা নির্ধারিত স্থানে রোপণ করে পরবর্তী যতœ ও পরিচর্যা
করা প্রয়োজন। গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে চারা রোপণ করে একটি অবলম্বনের
সাহায্যে চারাটি বেঁধে দিতে হবে। খরা মৌসুমে সেচ আর বর্ষা মৌসুমে আগে ও পরে
সার দিতে হয়।
সম্ভাবনা
বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের মান খুবই উন্নত। এ আম বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর
পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে আরব আমিরাত, আবুধাবি,
দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইতালি, জার্মানি ও
যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ফজলি, হিমসাগর এবং ল্যাংড়া জাতের আম
রফতানি হলেও আরও অনেক দেশে এর রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন আম আছে যা অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টি। আবার এমন টক আম আছে যা ভীষণ
টক। এই আম হলো বৈজ্ঞানিক নামেÑ সিলভাটিকা রকসবা। আর খাওয়ার উপযুক্ত আমের
বৈজ্ঞানিক নাম গধহমরভবৎধ রহফরপধ.
ইংরেজদের আগে পর্তুগিজ আলম থেকে এদেশে শত শত বছর ধরে পশ্চিমারা আমাদের
আমলের আমের প্রশংসা করে বিস্তর লেখালেখি করে গেছেন। ওই যে সেই বাদশা অসময়ে
আম খেতে চাইলে নিরুপায় হয়ে উজির এক কাণ্ড করেন। কারণ বাদশার আম খাওয়ার রোগ
না হয় সারবে না। বাদশা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে রাজ্যের সর্বনাশ! তাই উজির
উপায় না দেখে, নিজের দাড়িতে তেঁতুলের একটু টক ও চিনি মিশিয়ে বাদশাকে চুষতে
দেন। ব্যস, বাদশাও দাড়িকে মনে করলেন আমের আঁশ, আর টক মিষ্টি থেকে পেয়ে
গেলেন স্বাদ। বাদশার রোগ সেরে গেল, রাজ্যও বাঁচল।
আর ইংরেজ সাহেব এই পাকা হড়হড়ে আম খেতে গিয়ে হাত জামা কাপড় নষ্ট করে ফেললেন।
তাই তিনি বললেন, আম খাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো, আমটা নিয়ে বাথটাবে চলে
যাওয়া, সেখানে আমটা খেয়ে একেবারে গোসল শেষ করে পরিষ্কার হয়ে চলে আসাই সেরা
উপায়। কিন্তু তারাই আবার আমকে বললেন, ‘প্রিন্স অব ফ্রুট’ বা ‘ফলের
রাজপুত্তুর’। আর অনেকেই এদেশীয়দের সঙ্গে মনে প্রাণে সায় দিয়ে বলেছেন, আম
ফলের রাজা।